খতিয়ান কি? খতিয়ান কত প্রকার?

ভূমিকাঃ বাংলাদেশের সরকার ভূমি ব্যবস্থাপনা ও ভূমির মালিকানার নির্ধারণের জন্য খতিয়ান একটি অপরিহার্য দলিল। এটি একটি সরকারী কাগজ যা জমির মালিকানা, সীমানা, আয়তন এবং ব্যবহারের বিস্তারিত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করে। খতিয়ান মূলত ভূমি জরিপের সময় প্রস্তুত করা হয় এবং এটি জমি সংক্রান্ত যে কোন আইনগত প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

খতিয়ান কি?

ভূমি জরিপ চলাকালীন সময়ে মৌজা অনুসারে এক বা একাধিক জমির মালিকানা সহ জমির সীমানা, আকার, ঠিকানা, জমির অবস্থান, দাগ নম্বর, জমির পরিমাণ, খাজনার পরিমাণ ইত্যাদি তথ্যসম্বলিত যে নথি তৈরি করা হয় তাকে খতিয়ান বলে। খতিয়ানে কোন কোন তথ্য থাকে তা জানতে খতিয়ান অনুসন্ধান করে দেখতে পারেন।

খতিয়ান হচ্ছে জমির মালিকানা ও ব্যবহারের বিস্তারিত বিবরণ সংক্রান্ত একটি সরকারী দলিল। এটি বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ভূমি জরিপ চলাকালীন সময়ে তৈরি করা হয়। খতিয়ান শুধুমাত্র জমির মালিকানা নির্ধারণেই নয়, বরং এটি জমির সঠিক সীমানা নির্ধারণ, কর নির্ধারণ, এবং জমি সংক্রান্ত যে কোন বিবাদ মীমাংসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও, জমিতে কোন প্রকার নির্মাণ কাজের অনুমতি গ্রহণের জন্যও খতিয়ানের প্রয়োজন হয়।

খতিয়ান কত প্রকার?

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খতিয়ান মূলত ৪ ধরনের হয়ে থাকে :

সি এস খতিয়ান

১৯৪০ সালে ব্রিটিশ আমলে প্রথমবার ভূমি জরিপ করে যে খতিয়ান প্রস্তুত করা হয়, তা সিএস খতিয়ান নামে পরিচিত। এটি বেশ পুরাতন এবং জমির মূল মালিকানা ও ব্যবহার সম্পর্কে প্রথমিক তথ্য সরবরাহ করে।এই সময়ে সরকারি আমিনগণ প্রতিটি ভু খন্ড পরিমাপ করে তার পরিমান, অবস্থান ও মৌজা নকশা এবং মালিক / দখলকারের বিররণ সংবলিত খতিয়ান তৈরি করেন যা সি এস খতিয়ান নামে অবিহিত। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচাইতে প্রাচীনতম খতিয়ান।

আপনার বা আপনার ফ্যামিলির কারো কাছে যদি সিএস খতিয়ান থেকে থাকে তাহলে উক্ত সিএস খতিয়ান অনুসন্ধান করে দেখতে পারেন বিস্তারিত তথ্য।

এস এ খতিয়ান

ভারত উপমহাদেশ ভাগ হবার পরে ১৯৫০ সালের জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাসের পর সরকার জমিদারি অধিগ্রহণ করেন। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ১৯৫৬ সালে সরকারের ভূমি ব্যবস্থাপনা কর্তৃক প্রদত্ত জরিপে দায়িত্বরত কর্মচারীগন সি এস খতিয়ান সংশোধন করে নতুন এক ধরনের খতিয়ান তৈরি করে, যা এস এ খতিয়ান নামে পরিচিত।

আর এস খতিয়ান

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে 1970 সালে পাকিস্তান আমলের প্রস্তুতকৃত এস এ খতিয়ানের বিভিন্ন ভুল সংশোধন করার লক্ষ্যে ভূমি জরিপ কার্যক্রম চালু হয়। উক্ত কার্যক্রমের যে খতিয়ান তৈরি করা হয় তাহাই আর এইচ খতিয়ান নামে পরিচিত।

পাকিস্তান আমলের প্রস্তুতকৃত ভূমি জরিপে বিভিন্ন ভুল পরিলক্ষিত হয়, কেননা তখনকার কর্মকর্তা কর্মচারীগণ সরজমিনে না গিয়েই কোনোভাবে খতিয়ান প্রস্তুত করে যা বিভিন্ন ধরনের ভুলে পরিলক্ষিত হয়, যেমন মালিকানা কিংবা জমির পরিমাপে কিংবা খতিয়ানের বিভিন্ন তথ্যে ভুল পাওয়া যায়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার এটি কি সংশোধন করার জন্য ভূমি জরিপ চালু করে। বর্তমানে অনেকের কাছেই আরএস খতিয়ান বিএস খতিয়ান নামে পরিচিত।

আপনার বা আপনার ফ্যামিলির কারো কাছে যদি আর এস খতিয়ান থেকে থাকে তাহলে উক্ত আর এস খতিয়ান অনুসন্ধান করে দেখতে পারেন বিস্তারিত তথ্য।

বি এস খতিয়ান

১৯৯৮ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত চলমান ভূমি জরিপ থেকে প্রস্তুতকৃত নথিকে বি এস খতিয়ান বলা হয়। ১৯৯৮ সালে ঢাকা মহানগর ভূমি জরিপ এর মাধ্যমে এই খতিনের উদ্বুদ্ধ হয়। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমি জরিপ চালু আছে এবং এই জমি জরিপের মাধ্যমে বিএস খতিয়ান প্রস্তুত হয়। যেহেতু বর্তমানে সমস্ত খতিয়ান গুলো বিএস খতিয়ান নামে অভিহিত তাই জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য পাওয়ার জন্য বি এস খতিয়ান অনুসন্ধান করে এই খতিয়ানের বিভিন্ন তথ্য দেখতে পারেন।

খতিয়ানের প্রয়োজনীয়তা

খতিয়ানের প্রয়োজনীয়তা বিভিন্ন কারণে হয়, যেমন:

  1. জমির প্রকৃত মালিক কে তা নির্ধারণ করতে খতিয়ান ব্যবহার করা হয়। এতে জমির মালিকানা নিয়ে কোন দ্বন্দ্ব বা বিবাদ এড়ানো যায়।
  2. জমির সঠিক সীমানা এবং আয়তন নির্ধারণ করতে খতিয়ান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  3. জমি সংক্রান্ত যে কোন আইনগত বিষয়ে খতিয়ান গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে কাজ করে।
  4. ভূমি কর নির্ধারণ ও আদায়ের ক্ষেত্রে খতিয়ান ব্যবহৃত হয়।
  5. ভূমি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য খতিয়ান প্রয়োজন।
  6. সরকার জমির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে খতিয়ান ব্যবহার করে।
  7. জমিতে কোন প্রকার নির্মাণ কাজ করতে হলে খতিয়ানের মাধ্যমে জমির মালিকানা ও সীমানা যাচাই করা হয়।

এই কারণগুলোতে খতিয়ান একটি অপরিহার্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হয় এবং জমি ব্যবস্থাপনা ও আইনগত প্রক্রিয়াগুলোতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Similar Posts

6 Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।