ই নামজারি আবেদন করার নিয়ম
সাধারণভাবে নামজারি বলতে জমির মালিকানা পরিবর্তন করাকে বুঝায়, অর্থাৎ পুরনো খতিয়ানে জমির পুরনো মালিকের নাম পরিবর্তন করে হালনাগাদ রেকর্ড সংশোধন করে নতুন মালিকানা প্রতিস্থাপন হলো নামজারি। জমি ক্রয় বিক্রয় অথবা বিভিন্ন সূত্রে জমি পাওয়ার পরে সেটিকে নামজারি করতে হয়। নামজারি করার মাধ্যমে জমি খারিজ হয় এবং খতিয়ানে জমির নতুন মালিক তৈরি হয়। আর বর্তমানে ভূমি অফিসে না গিয়েই অনলাইনে মাধ্যমে নামজারি আবেদন করা যায়। ই নামজারি আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে কিছু নির্দেশনা দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়, চলুন বিস্তারিত জেনে নেই।
ক্রয় সূত্রে কোন জমি পেলে কিংবা ওয়ারিশ সুত্রে অথবা অনুদান সূত্রে কোন জমি পেলে সেটি নামজারি করে নিজের নামে রেকর্ড করে রাখতে হয়, এতে সরকারি ভূমি অফিসের রেজিস্ট্রারে আপনার নামে জমিটি লিপিবদ্ধ থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় ই নামজারি আবেদন করতে হয় এবং এই আবেদনটি নিষ্পত্তি হতে ২৮ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। নামজারির আবেদন নিষ্পত্তি সহজ করতে যে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া দরকার সেটি হলো আবেদনের ফরম নির্ভুল ও সঠিকভাবে পূরণ করা। ভুল বা তথ্যের গরমিলের কারণে নামজারি আবেদন মঞ্জুর হয় না।
ই নামজারি করার নিয়ম
জমির ই নামজারি আবেদন করতে হলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ই ওয়েবসাইট mutation.land.gov.bd ভিজিট করে ” নামজারি আবেদন” অপশনে যেতে হবে, এরপর নামজারি আবেদন বাবদ কোর্ট ফি বাবদ ২০ টাকা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পরিশোধ করে ভেরিফাই করতে হবে। এরপরে জমির তথ্য এবং মালিকানা তথ্য দিয়ে নামজারি আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। সমস্ত সঠিক এবং নির্ভুল তথ্য দিয়ে আবেদন দাখিল করতে হবে, এরপরে আবেদনের একটি পিভিউ আপনি দেখতে পাবেন এখানে আবেদন নম্বর দেখতে পাবেন এবং একই পেইজে নোটিশ ফি বাবদ আরো ৫০ টাকা প্রদান করতে হবে।
নামজারি সংক্রান্ত সমস্ত ফি আপনি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার অর্থাৎ নগদ বিকাশ রকেট কিংবা ডেবিট ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে প্রদান করতে পারবেন। আবেদন দাখিল হয়ে গেলে এরপরে আপনাকে অনলাইনে শুনে নিতে অংশগ্রহণ করতে হবে। এজন্য অনলাইন আবেদন শুনানি পেইজে ” হ্যাঁ” ক্লিক করতে হবে। এরপরে ধাপে ধাপে বাকি কাজগুলো সম্পন্ন করতে হবে।
ই নামজারি আবেদন করার নিয়ম
অনলাইনে ই নামজারি আবেদন করতে হলে আপনাকে প্রথমে ভিজিট করতে হবে Mutation Land Gov BD ওয়েবসাইট এবং এখান থেকে নামজারি আবেদন লিংকে ক্লিক করতে হবে।
প্রথম ধাপঃ ঘোষণা
আবেদন অপশনে গেলে একটি পূর্ণাঙ্গভাবে নামজারি আবেদন ফরম চলে আসবে। এখানে আপনাকে সঠিকভাবে এবং নির্ভুলভাবে জমি সংক্রান্ত এবং মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখ করতে হবে। এবং কোর্ট ও নোটিশ ফি বাবদ ৫০ ও ২০ টাকা মোট ৭০ টাকা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে প্রদান করতে হবে।
এই ফর্মটি আপনাকে পূরণ করতে হবে এবং যে সমস্ত তথ্য দিতে হবে তা হলো –
- নামজারির উৎস অর্থাৎ আপনি জমিটি কোন সূত্রে পেয়েছেন সেটি সিলেক্ট করতে হবে ( এখানে ক্রয়, ওয়ারিশ, হেবা, ডিক্রি, নিলাম, বন্দোবস্ত, অন্যান্য )। যদি আপনি জমিটি ক্রয় সূত্রে পেয়ে থাকেন এক্ষেত্রে ক্রয় সিলেক্ট করার পরবর্তীতে পেইজে আপনার সামনে আরো কতগুলো অপশন চালু হবে,
- নামজারি আবেদনকৃত জমির ঠিকানা অর্থাৎ প্রথমে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, এবং মৌজা সিলেক্ট করতে হবে। মৌজার ক্ষেত্রে অবশ্যই জেএল নাম্বারটি মনে রাখতে হবে, আপনার জমিতে যদি একাধিক মৌজায় বিদ্যমান থাকে তাহলে প্রত্যেকটি মৌজা আলাদা আলাদা ভাবে উল্লেখ করতে হবে।
- এরপরে জমি জরিপের ধরন নির্বাচন করতে হবে – এখানে আপনাকে আপনার এলাকার জন্য এসএ/এমআরএস, আরএস/বিএস, মহানগর, দিয়ারা, সিএস যা প্রযোজ্য জরিপটি সিলেক্ট করতে হবে। সবশেষে পরবর্তী ক্লিক করতে হবে
দ্বিতীয় ধাপঃ জমির তফসিল ও গ্রহীতার তথ্য প্রদান
পূর্ব পেইজে দেওয়া আপনার এনআইডি অনুযায়ী তথ্য এই পেইজে যাচাই করা হবে, কোন তথ্য ভুল থাকলে সেটি সংশোধন করে নিতে হবে, এরপরে গ্রহীতার তথ্য তার জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী দেখতে পাবেন। অধিকতার হিসেবে শুধুমাত্র গ্রহীতার স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে এই পেইজে।
জমির যদি এক বা একাধিক গ্রহীতা থাকে সে ক্ষেত্রে একাধিকগ্রহিত তার তথ্য আলাদা আলাদা ভাবে সংযুক্ত করতে হবে।এখানে জমির খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, আবেদিত জমির পরিমাণ , খতিয়ানে উক্ত দাগে জমির পরিমাণ টাইপ করে দিতে হবে। অনুরূপ ভাবে একই খতিয়ান থেকে বা একই মৌজাভুক্ত একাধিক খতিয়ান থেকে আরও দাগে আরো জমি এই নামজারির সাথে যুক্ত করতে হলে সেক্ষেত্রে “আরও খতিয়ান সংযুক্ত করুন” ও “আরও দাগ সংযুক্ত করুন” চেপে আরও খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, আবেদিত জমির পরিমাণ , খতিয়ানে উক্ত দাগে জমির পরিমাণ ইত্যাদি টাইপ করে দিতে হবে।
তৃতীয় ধাপঃ দাতার তথ্য সংযুক্তি
এখানে যে ব্যক্তির থেকে আপনি জমি গ্রহণ করবেন সেই ব্যক্তিগত তথ্য যেমন এন আই ডি নাম্বার, হোল্ডিং ট্যাক্স নাম্বার জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার এবং ছবি, ঠিকানা ও জমির পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে।
এর পরে জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন ডকুমেন্ট আপনাকে সংযুক্ত করতে হবে যেমনঃ
- জমির মূল দলিলের স্ক্যান কপি
- খতিয়ানের স্ক্যান কপি
- জমীর চৌহদ্দিসহ হাত নকশা
- অনন্য
প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় ধাপ সঠিকভাবে সম্পন্ন করার পরে আবেদনটি দাখিল করতে হবে, এই পেইজে আপনাকে আপনার নামজারি আবেদন নাম্বার সহ বিস্তারিত তথ্য প্রিভিউ দেখানো হবে। সুবিধার্থে আপনি পেজটি প্রিন্ট করে রাখতে পারেন, পরবর্তীতে আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা জানতে আবেদন নাম্বারটি সংরক্ষণ করুন।
মনে রাখবেন একবার আবেদন দাখিল হয়ে গেলে সেটা সংশোধন করার কোন সুযোগ নেই, এজন্য প্রতিটা ধাপ পূরণ করার সময় বারবার তথ্যগুলো সঠিকভাবে যাচাই করে নিবেন।
চতুর্থ ধাপঃ ফি প্রদান
আবেদনটি দাখিল হয়ে গেলে এই ধাপে আপনাকে দুটি ফি , প্রদান করতে হবে প্রথমটি হলো কোর্ট ফি এবং দ্বিতীয়টি হল নোটিশ ফি, ৫০ ও ২০ টাকা ক্রমের মোট ৭০ টাকা আপনাকে প্রদান করতে হবে মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে।
নামজারির জন্য শুনানি
নামজারি আবেদনের টাকা পরিশোধ করার শেষে আপনি অনলাইন শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে চান কিনা এটি জানতে চাওয়া হবে, অনলাইন শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে হলে ” হ্যাঁ “ বাটনে প্রেস করতে হবে অথবা http://oh.lams.gov.bd লিঙ্কে গিয়ে অনুরোধ জানাতে হবে। এ বিষয়ে সহকারি কমিশনার (ভূমি) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন এবং অনলাইন শুনানির জন্য একটি লিংক আবেদনে প্রদত্ত মোবাইলে পাঠাবেন। শুনানির পূর্বে খসড়া খতিয়ানটি নাগরিক কর্নার হতে দেখা যাবে। খসড়া খতিয়ানে কোন তথ্য ভুল থাকলে শুনানির সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে অবগত করবেন।
ক্রয়, উত্তরাধিকার বা হেবাসূত্রে যিনি জমির নতুন মালিক হয়েছেন এবং নামজারির আবেদন করেছেন তাকে এবং এই জমির পূর্ববর্তী মালিককে শুনানির জন্য ডাকা হয়। তবে পূর্ববর্তী মালিক মৃত হলে বর্তমান মালিককে শুনানিতে থাকতে হয়। এই শুনানি জমির মালিকার সত্যতা যাচাইয়ে কিংবা কারও কোন অভিযোগ থাকলে সেগুলো ফয়সালা হয়ে থাকে।
আসসালমুআলাইকুম
একটি ফ্ল্যাট প্রথম পক্ষের কাছ থেকে ক্রয় করার পর দ্বিতীয় পক্ষ তার সন্তানকে (তৃতীয় পক্ষ) যদি হেবা করে দেন, সেক্ষেত্রে নামজারির ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের কি কি কাগজ পত্র দেওয়া লাগবে?
হেবা দলিল এর বর্তমান কপি
ফ্ল্যাটের পূর্বের মালিকানার কাগজপত্র
ওয়ারিশ সনদ
জাতীয় পরিচয়পত্র
হেবা ঘোষণা পত্র
সাক্ষীদের তথ্য
সংশ্লিষ্ট ফি জমার রসিদ
ভূমি উন্নয়ন করের রসিদ (যদি প্রযোজ্য হয়)
ওয়ারিশ সনদ মূলে ক্রয়ের ক্ষেত্রে নামজারি করতে কি বন্টন দলিল লাগে
ওয়ারিশ সনদের ভিত্তিতে নামজারি করার সময় বণ্টন দলিলের প্রয়োজনীয়তা নির্ভর করে সম্পত্তির ধরণ, প্রাসঙ্গিক আইন এবং স্থানীয় ভূমি অফিসের নিয়মাবলীর উপর। সাধারণত:
যদি ওয়ারিশদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে কোনো মতভেদ না থাকে:
ওয়ারিশ সনদই যথেষ্ট হতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রে ভূমি অফিস বা রেজিস্ট্রার অফিস থেকে নিশ্চিত হতে হয় যে সম্পত্তির সব ওয়ারিশ একমত। এর জন্য একটি ঘোষণাপত্র বা সম্মতিপত্র জমা দিতে হতে পারে।
যদি সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে মতভেদ থাকে:
এই ক্ষেত্রে বণ্টন দলিল (Partition Deed) আবশ্যক। বণ্টন দলিলে ওয়ারিশদের মধ্যে কে কোন অংশ পাবেন তা উল্লেখ থাকবে এবং এটি রেজিস্ট্রি করাতে হবে।
স্থানীয় ভূমি অফিসের চাহিদা অনুযায়ী:
অনেক সময় ভূমি অফিস বণ্টন দলিল ছাড়া নামজারি করতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে। তাই আপনার স্থানীয় ভূমি অফিসে যোগাযোগ করে তাদের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করা উচিত।